(১) সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর করে পড়াকে অবজ্ঞা করা

(১) সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর করে পড়াকে অবজ্ঞা করা :

‘ক্বছর’ অর্থ কমানো। চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতকে দু’রাক‘আত করে পড়াকে ‘ক্বছর’ বলে। ক্বছর করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাদাক্বাহ বা রহমত। ‘জমা’ অর্থ একত্রিত করা। যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার ছালাত এক সঙ্গে আদায় করা। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীছ থাকলেও অধিকাংশ মুছল্লী অতি পরহেযগারিতা দেখাতে গিয়ে এই সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং পূর্ণ  ছালাত আদায় করতে গিয়ে গাড়ী ধরার ব্যস্ততায় ছালাতকে তাড়াহুড়ায় পরিণত করে। সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর ও জমা করার যে হিকমত, তা অনেকেই বুঝতে চায় না। সময়ের ঘাটতি, স্থান পাওয়া, পবিত্রতা হাছিলের জন্য সুযোগ মত পানি পাওয়া, ছালাতের  চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা, প্রশান্তির সাথে ছালাত আদায় করা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনো চিন্তা করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُبِيْنًا.

‘যখন তোমরা সফর কর, তখন তোমাদের ছালাতে ‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত করবে। নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (নিসা ১০১)।

عَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ قُلْتُ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ( لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلاَةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا) فَقَدْ أَمِنَ النَّاسُ فَقَالَ عَجِبْتُ مِمَّا عَجِبْتَ مِنْهُ فَسَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ  عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللهُ بِهَا عَلَيْكُمْ فَاقْبَلُوْا صَدَقَتَهُ.

ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) বলেন, আমি একদা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে নিম্নের আয়াত পড়ে বললাম, ‘তোমাদের ছালাত ‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত করবে’। মানুষ এখন নিরাপদ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি যেমন আশ্চর্য হয়েছ আমিও তেমনি এতে আশ্চর্য হয়েছিলাম। অতঃপর আমি রাসূল (ছাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ‘এটা ছাদাক্বাহ। আল্লাহ তোমাদের প্রতি ছাদাক্বাহ করেছেন। তোমরা তার ছাদাক্বাহ গ্রহণ কর’।[1]

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  كَانَ فِىْ غَزْوَةِ تَبُوْكَ إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ يَرْتَحِلَ جَمَعَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَإِنْ يَرْتَحِلْ قَبْلَ أَنْ تَزِيْغَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى يَنْزِلَ لِلْعَصْرِ وَفِى الْمَغْرِبِ مِثْلَ ذَلِكَ إِنْ غَابَتِ الشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ يَرْتَحِلَ جَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ وَإِنْ يَرْتَحِلْ قَبْلَ أَنْ تَغِيْبَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الْمَغْرِبَ حَتَّى يَنْزِلَ لِلْعِشَاءِ ثُمَّ جَمَعَ بَيْنَهُمَا.

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) তাবূক যুদ্ধে অবস্থান করছিলেন। সওয়ার হওয়ার পূর্বে যদি সূর্য ঢুলে পড়ত, তখন তিনি যোহর ও আছর জমা করতেন। আর যদি সূর্য ঢুলে পড়ার পূর্বে সওয়ার হতেন, তখন যোহরকে দেরী করতেন আছর পর্যন্ত। অনুরূপ করতেন মাগরিবের ছালাতের ক্ষেত্রে। সওয়ার হওয়ার পূর্বে যদি সূর্য ডুবে যেত, তাহলে মাগরিব ও এশা জমা করতেন। আর সূর্য ডুবার পূর্বে যদি সওয়ার হতেন, তখন মাগরিবকে দেরী করতেন এবং এশার ছালাতের জন্য নেমে পড়তেন। অতঃপর মাগরিব ও এশা জমা করতেন।[2]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  يَجْمَعُ بَيْنَ صَلاَةِ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ إِذَا كَانَ عَلَى ظَهْرِ سَيْرٍ وَيَجْمَعُ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন সফর অবস্থায় থাকতেন, তখন যোহর ও আছর জমা করতেন। অনুরূপ মাগরিব ও এশাও জমা করে আদায় করতেন।[3]

[1]. মুসলিম হা/১৬০৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৪১, (ইফাবা হা/১৪৪৩), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/১৩৩৫, পৃঃ ১১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৫৭, ৩/১৬৭ পৃঃ। [2]. আবুদাঊদ হা/১২০৮, ১/১৭০ পৃঃ, ‘দুই ছালাত’ জমা করা অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১৩৪৪, পৃঃ ১১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৬৬, ৩/১৭১ পৃঃ, ‘সফরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ। [3]. বুখারী হা/১১০৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৯, (ইফাবা হা/১০৪২, ২/২৮৭ পৃঃ); মিশকাত হা/১৩৩৯, পৃঃ ১১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৬১, ৩/১৬৯ পৃঃ।

Posted from ইসলামী সাইট

This entry was posted in 10. সফরের সালাত, সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর করে পড়াকে অবজ্ঞা করা. Bookmark the permalink.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s